Text Size

20040503 Ratha-Yātrā Address

3 May 2004|Duration: 00:38:38|English|Festival Address|Kolkata, India

আজকে চেষ্টা করব বাংলা ভাষা হরি কথা কিছু বলার জন্য। সংক্ষিপ্ত ভাগবতী ভাষণ। প্রথমেই আমার গুরুদেব ইতিপূর্বেই প্রণাম করেছি। মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্। যৎকৃপা তমহং বন্দে শ্রী গুরুং দীন তারণম পরমানন্দমাধবম্ শ্রী চৈতন্য ঈশ্বরম্ হরি ওঁ তৎ সৎ আমরা উপস্থিত আছি জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা রথ যাত্রা মহামহোৎসব, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত অর্থাৎ ইস্‌কনের আয়োজিত কলকাতা রথযাত্রা। প্রথম জগন্নাথ কাল পৌঁছেছেন, আজকে আমাদের সংস্কৃতিক এবং ভাগবতী অনুষ্ঠান। প্রথম বিভাগ এক সপ্তাহ চলবে। আপনাদের বন্ধুগণ সবাইকে বলবেন, আত্মীয়-স্বজন সবাই সজন যেন প্রত্যেকদিন আসেন। মহাপ্রসাদ পান, জগন্নাথ দর্শন করেন এবং হরি কথা শুনেন, দুটো মঞ্চ আছে এই মঞ্চে হরি কথা, কীর্তনের পার্টি আরেকটা মঞ্চ আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাটক,নৃত্য,সংগীত।

আমাদের ইস্‌কন আচার্য প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন শ্রী শ্রীমৎ অভয়চরণ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। ওঁনার পূর্বাশ্রমের নাম অভয়চরণ দে ছিল এখানে ক্যালকাটা জন্মগ্রহণ করে ১৮৯৬ সালে। তখনই ১০৬ বছর হইল। ১০৬ বছর আগে তো এই ক্যালকাটা রথযাত্রা উনার যখন ছয় বছর বয়সে, তো উনি বলেছেন ওনার বাবার কাছে, বাবা বলছেন, “তুমি কি চাও?” “আমি রথযাত্রা করতে চাই, আমি রথ চাই।” তখন বাবা ওর জন্য নিজে একটা রথ তৈরি করেছে, ছোট একটা চার হাত পাঁচ হাতের পুরো রথ। তাঁর সব বন্ধুগণের সাথে হ্যারিসন রোডে যেটা এখন মহাত্মা গান্ধী রোড, আগে হ্যারিসন রোড নাম ছিল সেখানে রথটা বের হয়েছে। তো সে তো হচ্ছে ১০০ বছর আগে, এটা হল প্রভুপাদের নিজের যে রথ করেছে তার শতবার্ষিকী পূর্তি হচ্ছে। আর ইস্‌কন ক্যালকাটা এসেছে ১৯৭০ সালে, আমাদের এমনি তৈরি হতে দু'বছর লেগেছে ১৯৭২ সালে আমাদের প্রথম ক্যালকাটা রথ হয়। এখন আমাদের ক্যালকাটা ইস্‌কনে রথ ৩০ বছর যাবত চলছে। আগে বড় করে রথ হতো না কেননা ট্রাম লাইন, রেললাইন বিভিন্ন তারের জন্য বড় রথ ক্যালকাটা থাকতে পারেনি।

আমাদের ইস্‌কনে ১৯৬৭ সালে সানফ্রান্সিসকো, যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা, প্রথম ইস্‌কনে রথ হয় এবং তখন একটা লড়ি উপরে এই রথ সাজিয়ে করেছে। তো পরে হয়েছে ১৯৬৮ সালে একজন ইঞ্জিনিয়ার, কলেজ স্নাতক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষা প্রাপ্ত হয়ে একজন ভক্ত, তার নাম জয়ানন্দ প্রভু উনি প্রথম ইস্‌কনে আধুনিক টেলিস্কোপিক রথ তৈরি করেন। যে রথটা বড় ছোট হয়ে যায়। যখন তার আসে ছোট হয়ে তারকে পার করে আবার বড় হয়ে যায়। সে রথ তৈরি হওয়ার সময় আমি সেই মন্দিরে যাই এবং এইখানে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়, ওই রথ তৈরি করি ওনার সাথে আমাকে অনুরোধ করেছে যে, “তুমি সাহায্য করতে পারবে আমরা এক সপ্তাহ মধ্যে রথ তৈরি করব?” “এক সপ্তাহের মধ্যে কি করে এত বড় রথ তৈরি হবে?” “হয়ে যাবে কৃষ্ণের কৃপায়। তুমি সাহায্য করবে কি না?” “ঠিক আছে সাহায্য করবো।” তখন সেই রথ তৈরি করার সেবায় আমি যোগদান করি। তখন আমার বয়স ১৯ বছর বয়স এবং রথ যখন তৈরি হয়ে গেল, রথে যেদিন রথ হবে, সেদিন আমি মনস্থির করি, আমি ব্রহ্মচারী হব এবং আমি একটা পথ আত্মসমর্পণ করব। তখন আমার লম্বা চুল ছিল, রথের দিন কেটে ফেলেছি সব। এইভাবে ইস্‌কনে পাশ্চাত্যে প্রথম বড় রথে তৈরি হওয়া কাজে ছিলাম।

যখন আমি এখানে ক্যালকাটা সভাপতি ছিলাম, তখন এই ক্যালকাটা আবার এরকম বড় রথ করতে পারব। কেননা যদি সানফ্রান্সিসকো আর ক্যালকাটা দুটো শহরেই ট্রাম লাইন আছে। সানফ্রান্সিসকো ট্রাম আছে আর ক্যালকাটা ট্রাম। সানফ্রান্সিসকো যদি বড় রথ হতে পারে তাহলে ক্যালকাটা হবে না কেন? সেইজন্য এখানে আমাদের এই বড় রথ তৈরি করা হল। আমাদের দীর্ঘদিন থেকে এ রথ প্রথমে আমরা ইস্‌কন মন্দির থ্রিসি আলবার্ট রোড রাধা গোবিন্দ মন্দির থেকে আমরা শ্যামবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাই। অনেক সময় লেগেছে। যখন পাতাল রেল কাজ শুরু হয় তখন আমাদের আর অনুমতি দেয় নি যে এত দূর যাওয়ার ওই রাস্তাটা চৌরঙ্গী, (১৮:১১) ছিল। তখন আমাদের ময়দানে দিয়েছে এবং আমরা এখন নতুন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স অফিস থেকে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ মাঝখানে শুরু করে গিয়ে ময়দান পর্যন্ত... আমরা পার্ক স্ট্রিট, অ্যামহের্স্ট স্ট্রিট, লর্ড সিনহা রোড, আমরা আসি এবার যেহেতু লর্ড সিনহা রোড ওভার পাস কাজ চলছে, আমাদের সোজা চলে আসছি। ...হাজার হোক বা যত যাই গড়িয়া হাট রোড কাছে এভাবে দিয়া করে আসা হয় ল্যান্সডাউন রোডে। আমরা এবার আবার কখনো আমরা দেশপ্রিয় পার্ক আমরা রথ উৎসব হল শ্যামবাজার, দেশপ্রিয়। শ্যামবাজার হলে দক্ষিণ ক্যালকাটাবাসী বলছে আমাদেরা যোগদান করতে পারছি না আর দেশপ্রিয় পার্ক হলে উত্তর ক্যালকাটাবাসী বলছে আমরা যোগদান করতে পারছি না, এবার আমাদের ময়দান কয়েক বছর থেকে চলছে এখানে মধ্য জায়গা, উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিক থেকে সব এখানে মিলন করতে পারছে। এবং এখানে বিরলা প্ল্যানিটারিয়াম স্টেশনের কাছে যেখানে থেকে আসতে চায় আসতে সুবিধা হয়। সেইজন্য আমাদের এখানে এখন এই রথের মেলা হয় আপনাদের সুবিধা করার জন্য, আপনাদের সেবা করার জন্য।

এখন জগন্নাথদেব ৩১ বছর যাবত এই রথযাত্রা চলছে, সেটা আমাদের উদ্দেশ্য যে ক্যালকাটা নিবাসী এখানে ঐশ্বর্যপূর্ণ জায়গা কৃষ্ণ তো বৃন্দাবনে ছিলেন তো নবদ্বীপ ধাম হচ্ছে গুপ্ত বৃন্দাবন। কেননা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন রাধা কৃষ্ণ মিলিত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, অবতীর্ণ স্থান হচ্ছে নবদ্বীপ, মায়াপুর ধাম। শাস্ত্রে বলছে এটা গুপ্ত বৃন্দাবন আর এই ক্যালকাটা বড় মহানগর এখানে রাধাগোবিন্দ জগন্নাথ রয়েছেন। এটা দ্বারকাপুরী মতো। আর এখানে আমাদের ক্যালকাটা নিবাসী সবাই তো জগন্নাথের প্রতি একটা ভক্তি আছে। প্রভুপাদ বলছে লোক জানে যেমন কৃষ্ণ জগন্নাথ মন্দির থেকে জগন্নাথ যান মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা, গুণ্ডিচা মন্দির হচ্ছে বৃন্দাবন। এক সপ্তাহ ৯ দিনের জন্য জগন্নাথদেব এ বৃন্দাবনে থাকছেন আমরা উনার সাথে বৃন্দাবন লীলা করছি। এই গোচারণ লীলা, ব্রজবাসী তারা কৃষ্ণ বাল্যকাল সেবা করেছে কিন্তু কৃষ্ণ ১৬ বছর বয়স পর মথুরা চলে গেলেন, তারপরে দ্বারকায় গেলেন তবে সবসময় ব্রজবাসীগণকে বলেছেন আমি শীঘ্রই ফিরে আসছি কিন্তু অনেকদিন হয়ে গেল। আসলে, একদিক থেকে কৃষ্ণ কখনো বৃন্দাবন থেকে যান না বাহিরাঙ্গ মনে হচ্ছে উনি গেছেন কিন্তু অলৌকিকভাবে সবসময় বৃন্দাবনেই থাকেন, এইভাবে অলৌকিকভাবে আছে কিন্তু ব্রজবাসী চায় প্রকটভাবে ওনাকে পাওয়া। সেই জন্য যখন কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর তখন যুধিষ্ঠির মহারাজ সম্রাট হইলেন। তো মহারাজ কৃষ্ণকে নিমন্ত্রণ করলেন এই সূর্যগ্রহণে বা কুরুক্ষেত্রে ভীষ্ম কুণ্ডে স্নান করে সকল ভক্তবৃন্দকে মনে কামনা পূরণ করা। তো সেজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চলে আসছে বলদেব আর সুভদ্রা সাথে, আর এই সুযোগে নন্দ মহারাজ, যশোদা মহারানী, রাধারানী গোপীগণ তাঁরা ব্রজধাম থেকে তাঁরা চলে এলেন, কারণ কুরুক্ষেত্রে বেশি দূর নাই বৃন্দাবন থেকে সেইজন্য এই সুযোগ নিয়ে সবাই কৃষ্ণের সাথে মিলন হতে গেছে। এইভাবে এই রথযাত্রা একটা মিলানের স্থান যেখানে ভক্তবৃন্দ ভগবানের সাথে মিলন হতে পারে।

আমাদের জীবনে আসলে কিসের জন্য? আমরা মানুষের জন্ম পেলাম, কি কাজের জন্য? আমরা কি কাজ করলে আমাদের জীবনে সফল হবে ভাবতে পারবো? অনেকে মনে করে যে, টাকা পয়সার জন্য যথেষ্ট সংগ্রাম করা হলো তাদের জীবন সফল হইল কিন্তু টাকা পয়সা তো চলে গেলে, আমাদের তো নিতে পারব না এখানে সব রাখতে হবে। ওই টাকা নিয়ে জীবনে কি করেছি সেটা আমার সাথে যাবে আর যেটা রেখেছি সেটা আমার বংশীদার কাছে থাকলো। তো এইভাবে, তাহলে কিভাবে আমাদের জীবনে সফল হয়? শাস্ত্রে বলে যদি আমরা ভগবানকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি জীবনে, ভগবান যদি খুশি হন আমাদের উপরে তাহলে আমাদের জীবন সফল হইল। ভগবান যদি খুশি হন সমস্ত কার্যে কৃত হয়। “সংসিদ্ধির্হরিতোষণম” (শ্রীমদ্ভাগবৎ ১.২.১৩) —- সর্ব সিদ্ধ হয় জীবন শ্রী হরি সন্তুষ্ট হলে। তা আমরা যদি ভগবানকে সন্তুষ্ট করতে চাই, আমাদের একই উপায় আছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন আমার যে ভক্তি করে, আমাকে যে সেবা করে, আমার ভক্ত যে সেবা করে সেটা আমাকে সন্তুষ্ট করে দেয়। আমাদের মনুষ্য হলাম। মানুষ আর পশুর মধ্যে তফাৎ আছে। একটা পশু খায়, ঘুমায়, মৈথুন করে এবং নিজেদের আত্মরক্ষা করে। মনুষ্য তাই করছে কিন্তু মনুষ্যে আহার, নিদ্রা, মৈথুন, ভয় ছাড়াও ধর্ম আছে। সেই ধর্মচর্চা করা মানুষের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। আমরা ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারি কিন্তু আমরা যদি মনুষ্য জন্ম পাই, কিভাবে আরামে থাকতে পারবো, আমরা কোন আরামে থাকলাম সেযদি আমাদের জীবনে লক্ষ্য হয় তাহলে আরামে থাকতে পাবো কিন্তু আমাদের আবার জন্ম নিতে হবে। এর পরের জন্ম কি হবে সেটা বলা যায় না। যেমন আমাদের ভাগবত এবং ভগবদ্‌গীতা এই দুই গ্রন্থ চর্চা করা আমাদের বিশেষ কলিযুগে উপায় কৃষ্ণ নিজে গীতা পাঠ করলেন। এই গীতা পাঠ করা অর্থ হচ্ছে যে ভগবান আমাদের নিজ উপদেশ দিয়ে আমাদের পথকে নিদর্শন করে দিলেন। আমরা ভগবানের চরণের জল মাথায় নেই সেটাকে আমরা বলি গঙ্গা মাই। আর ভগবানের মুখের শুনি বাণী ভগবদ্‌গীতা, আমাদের মনে রাখি সেটা আমাদের মাথাকে পবিত্র করবে শরীরকে পবিত্র করবে জীবনকে পবিত্র করবে।

এক এক অধ্যায় গীতা মহিমা পূর্ণ আছে। আমাদের মানুষের জীবন যদি আমরা অপব্যয় করি আমরা লোকসানে যাব। যেমন পদ্ম পুরানে মহাদেব শিব পার্বতী কাছে গীতার মাহাত্ম্যে ব্যাখ্যা করলেন, পার্বতী জিজ্ঞেস করেছেন, “প্রথম অধ্যায় গীতা কি মাহাত্ম্য?” “কুরুক্ষেত্র ধর্মক্ষেত্র” — যে প্রথম অধ্যায় তখন মহাদেব শিব বলেছেন একটা কাহিনী যে, “একজন ভক্ত পরিবার ছিল। সে পরিবারের একটা ছেলে ছিল কিন্তু সেই ছেলে ভক্তিপথে কোন মন আকৃষ্ট হয়নি। সেই ছেলে এরকম পাপের কাজে লিপ্ত ছিল, ব্যভিচারের কাজে লিপ্ত ছিল। তার মৃত্যু শরীর থেকে আত্মা, সূক্ষ্ম শরীর তুলে পরে যমলোকের কাছে নিয়ে এলো। সেখানে যমলোকে একটা আদালত আছে, যেখানে কর্ম বিচার করা হয় জীবনে কি করা হয়েছে, তার কি ফল হবে, পরের জীবন তার কি জন্ম হবে। যখন কি কি পাপ করেছে যমরাজের কাছে সব বলা হয়েছে তখন যমরাজ বলেছে তুমি আগে মানুষের জন্ম পেয়েছ,ভক্ত পরিবারে কিন্তু তোমার জীবনকে তুমি পশু মত কাজ করেছ, তুমি কোন পরমার্থিক কোন চর্চা করিনি। তার ফলে এই জীবন সে মানুষের জন্য পাবে না, তুমি পশু হবে। যেহেতু তুমি ভক্ত পরিবার তাই আমি একটা ভালো পশু দিচ্ছি তুমি এক ষার হবে। তখন পরের জন্মে এইভাবে ষার জন্ম পেয়েছে। তখন সেই মালিক (৩১:০৬) বলদ করে দিয়েছে এখন বলদ করে দিয়ে, (৩১:১৮) তখন ওকে বিক্রি করা হল। তো একজন গরিব লোক ছিল, তার কিছু ছিল না বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে কিছু বেচাকেনা করে এইভাবেই রোজগার হতো। তার একটা দরকার ছিল বলদ তার মাল নিয়ে যাওয়ার জন্য, ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। উপরে চড়ে যেত মাল নিয়ে আর বলদ এইভাবে এগিয়ে যেত। যেহেতু খুব গরীব, ভালো করে খাওয়াতে পারল না, খুব পাতলা হয়ে গেল। আর খুব মারধর করত, আরো তাড়াতাড়ি চলো এভাবে খুব কষ্ট পেয়েছে। এই ভাবে দীর্ঘদিন চলছিল, তখন জৈষ্ঠ মাসে খুব একদিন রোদ হইল। এত রৌদ্র হল আর খুব জল প্রয়োজন ছিল কিন্তু মালিকটা ভালো যত্ন করেনি। জল না দিয়ে এইরকম হিটস্ট্রোক হয়ে গেল, মাথা পাগল মত হয়ে গেল। নাক-মুখ থেকে ফেনা উঠেছে আর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ঘুরে গিয়ে এইভাবে পড়েছে, তো অনেক লোক জড়ো হয়েছে কি হলো? আর সেতো ঘ-ঘ-ঘ (গুরুমহারাজ আওয়াজের ভঙ্গি করছেন) এইভাবে বিভিন্ন শব্দ করে ঘুরে ঘুরে ঘুরে দিয়ে পড়ে গেল। তো একজন পুণ্যবান মেয়ে ছিল, মহিলা ছিল, ভদ্রমহিলা সে দেখে বলেছে, “আমার যদি কিছু সৎকর্ম থাকে আমার অর্ধেক পূণ্য এই জীবকে দান করছি।” তখন ওই দেহকে আবার যমলোক নিয়ে যাওয়া হল সুক্ষদেহ, আত্মাকে। যম বলছে এ অনেক কষ্ট পেয়েছে, অনেক কষ্ট পেতে হবে, অনেক পাপ করেছে। কিন্তু যমরাজ বললেন, “এখন পাপ পরে পাবে। আগে পুণ্য পেত। আগে পুণ্য ছিল না একটা ভদ্রমহিলা তাকে অর্ধেক পুণ্য দিয়েছে, এবার ব্রাহ্মণের জন্ম পাবে কারণ অনেক পুণ্য ছিল।”

তখন ব্রাহ্মণের কুলে জন্ম পেয়েছে। আর ঠিক তার সেই জন্মে মনে ছিল, এইভাবে একটু পারমার্থিক দিকে নজর রেখেছে, তাহলে ব্রাহ্মণ পদেই থাকবো। এইভাবে যখন ৯ বছর বয়স হল তখন তার শখ ছিল ওই যে ভদ্রমহিলা আমাকে পুণ্য দান করেছে, আমায় সুযোগ দিয়েছে ব্রাহ্মণ কূলে জন্ম পাওয়া, আবার কৃষ্ণভক্তি করা, সেই মহিলা আমি ধন্যবাদ বলতে চাই। তো অনেক খুঁজেছে তো পাইনি। অনেকক্ষণ পরে অনুসন্ধান পেয়েছে। তো সেই ভদ্রমহিলা বাড়িতে গিয়ে ‘টক টক টক টক টক’(দরজায় টোকা দেয়) এই ভাবে ডাক দিয়ে, মহিলা দরজা খুলে দেখছে নয় দশ বছরের একটা বালক। বলে, “কি চাও? আমি তোমাকে চিনি না।” তখন মনে হয়, মনে পড়ছে দশ বছর আগে একটা বলদ ছিল, রোদ্দুরেতে অনেক ঘুরে মরে গেছে গরমে আর তোমার অর্ধেক পূর্ণ দান করেছেন ওনার কাছে, আমি সেই বলদ ছিলাম এবং আমি আপনার আশীর্বাদে এই ব্রাহ্মণ কূলে জন্ম পেয়েছি। তো আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আমাকে পাঁচ মিনিট দিন তারপর আমি চলে যাব। তো তখন ভদ্রমহিলা তাকে ঢুকতে দেয়। ভদ্রমহিলা খুব সাংস্কৃতিক মহিলা ছিল আচার বা বিভিন্ন গান ইত্যাদি করতেন। এইভাবে বলেছে যে আমি জানতে চেয়েছি, বালক বলছে যে, “এইভাবে আমাকে পুণ্য দান করেছেন, আপনি আমাকে পুণ্য দান করেছেন, তো আপনি এত পুণ্য কোথায় পান? যাতে দান করতে পারেন। সাধারণ মানুষ তো টাকা দান করে পুণ্য লাভ করেন, পুণ্য কেউ দান করে না। তা আপনার এত পুণ্য আছে আপনি পুণ্য দান করছেন। তো আপনি এই কি করে এত পূর্ণ পেলেন যে আমাকে পশু থেকে ব্রাহ্মণ জন্মে নিতে পেয়েছি?” তখন ভদ্র মহিলা বলছে, “দেখো আমায় একজন একটা পাখি দিয়েছে, এই পাখি কথা বলে, তোতা পাখি দিয়েছে, এই তোতা পাখি প্রথম অধ্যায় গীতা মুখস্ত আছে এবং প্রত্যেকদিন আমার সাথে প্রথম অধ্যায় ভগবদ্‌গীতা পাঠ করে, প্রত্যেকদিন ভগবদ্‌গীতা পাঠ করে আমার অনেক পুণ্য হয়ে গেল। সেই জন্য আমি দিতে পেরেছি।” তো এইভাবে আরো লম্বা কাহিনী আছে, সব এখন বলছি না। এই তোতা পাখি বাকি জীবন ভগবদ্‌গীতা প্রথম অধ্যায় পাঠ করে থাকে এই জীবনের শেষে তা ভগবত ধাম ফিরে যায়।

আমরা এই জরজগতে আছি, এই জড়জগৎ একটা কারাগারের মতো। আমাদের আসল স্থান হচ্ছে ভগবানের সাথে, ভগবান বাস করছেন পারমার্থিক ধামে। আমরা যদি ভগবানের নাম করে, সেবা করে, ভজন করে জীবনযাপন করি গৃহে মধ্যে হোক বা বৈরাগীভাব এর মধ্যে হোক। আমাদের জীবনের শেষে ভগবানকে স্মরণ করলে আমরা ভগবানের ধামে ফিরে যেতে পারি। আর এই জীবনে আমরা ভগবানের সেবা করে যাচ্ছি, আমাদের ভগবত ধামের মতোই আমরা বাস করব। কেননা ভগবানের ধামে করা হয় ভগবানের সেবা, এই জীবনে যদি আমরা ভগবানের সেবা করে থাকি, তাহলে ভগবত ধাম বাস হয়ে গেল। আর আমরা ভগবানের সাথেই আমরা হয়ে আছি। তো সেই জন্য যত সাধু-বৈষ্ণব-গরু হয় যে আমাদের এই মনুষ্য জীবন এক মহা সুযোগ ভগবানের সেবা করার কিন্তু অধিকাংশ মানুষ মনে করছে মানুষের জীবন হচ্ছে আরাম করা, পরিশ্রম করে ভালো করে থাকবো কিন্তু আমরা কত ভালো থাকবো সেটা আমাদের কর্ম অনুসারে কর্মফল অনুসারে আমরা ভোগ করতে পারব। আগে আমরা কর্ম করে আছি, সেইটা আমরা যদি চেষ্টা না করেও তবু আমরা কিছু ভালো মন্দ পাব। সেটা আমরা যেটা পাবো না চেষ্টা না করলে সে হচ্ছে ভগবানের আশীর্বাদ। আমরা ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য যদি চেষ্টা করে থাকি, ভগবানের সেবা করার জন্য চেষ্টা করে থাকি তাহলে আমাদের জীবন সফল হয়। আসলে আমরা তো শরীর নাই আমরা সারা জীবন শরীর সেবা করবো বা কেন? সেইটা তো একদিন নষ্ট হবে। আমরা নিত্য শাশ্বত জীব, আমরা তো নষ্ট হবো না, আমরা ভগবানের সেবা করবো। আমাদের বিশেষ এই কর্তব্য আছে। তো আমরা এত দূরে আছি যে আমরা এত ভগবানের সেবা করতে মনে আসে না, সবকিছু মনে আসে খেলাধুলা, ভোগ বিলাস, কাজকর্ম কিন্তু ভগবানের সেবা করা যদি সাধু-গুরু-বৈষ্ণব আমাদের কাছে না বলে তাহলে মনে আসে না যে ভগবানের সেবা করতে হয়। আমাদের এই মা-বাবা, ঠাকুমা, ঠাকুরদা, দাদু তারা যদি ভক্ত হয় তাহলে তাদের মুখ থেকে আমরা শুনেছি ভগবানের নাম করতে হয়। অনেকে ভক্ত পরিবার আছে সে বংশক্রমে তারা হরিভজন করে আসছে। আজকাল আধুনিক এ যুগে অনেকে আছে যারা হরিভাজন থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। আগে হয়তো ছিল, এখন মনে করছে এটা প্রাচীন ব্যাপার আধুনিকজগত। তা মানে পাশ্চাত্য দেশের মানুষ তাদের শরীরে পোষণের সুব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তার সত্বেও একটু উনিশবিষ হলে তাদের মন রাগ হয়ে যায়, যা আছে তার জন্য খুশি নয় আরো চাই। কি চাই তাও জানেন উনি, যা মনে করতে পারে সবই আছে তবু খুশি নাই। আরো চাচ্ছে কি চাচ্ছে জানেনা, অশান্তির মধ্যে আছে। সেজন্য আমরা জানতে পারি যে এই জীবনে যদি সত্যিকারে শান্তি চাই ভক্তি না হলে শান্তি হয় না। ভগবান কৃপাতে আমাদের শান্তি অন্তরের থেকে উদ্ভব হয়, আমাদের শান্তি বাইরে থেকে আসবেনা।

সেই জন্য পাশ্চাত্য দেশের লোক এখন এই শান্তি পাওয়ার জন্য, দিব্য আনন্দ পাওয়ার জন্য, তারা কৃষ্ণ নামের প্রতি অনেকে এগিয়ে আসছে। এবং আমাদের এখন আমি আসছি রাশিয়া থেকে, আমি রুশ থেকে চলে আসছি। রুশে আমাদের একটা মেলা ছিল, সেই মেলা ছিল দেশের সংগীতের মেলা, সেই দেশের সংগীত, পারমার্থিক কোনো ব্যাপার নয় কিন্তু আমরা ওখানে একটা প্যান্ডেল খুলেছি এবং সারারাত আমরা অখন্ড কীর্তন করেছি। তো হাজার হাজার রুশের স্থানীয় লোক অখন্ড নামে যোগদান করে আমাদের সাথে কীর্তন করেছে। এই কীর্তন সারারাত করেছে ভোর পর্যন্ত। তো কয়েকজন আমার কাছে পরের দিন এসে বলেছে আমরা হরে কৃষ্ণ নাম, আমরা যে আপনার সাথে সারারাত গাইছি, কি গেয়েছি আমরা জানি না কিন্তু এইটুকু উপলব্ধি হলো যে আমাদের জীবনের মধ্যে এত আনন্দ আমরা কখনো পাইনি, তখন এই জন্য আমরা চলে আসছি আজকে। এক দম্পতি এসছে আমার কাছে জানার জন্য যে আমরা কি গাইছিলাম? কেন আমরা এত সুখী হলাম? সারারাত আমাদের ঘুম লাগেনি, আমরা সারারাত এই নেচে নেচে তোমার সাথে হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে/ হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে গেয়েছি কিন্তু ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মানে কি আমরা বুঝি না। আমি রূশের মানুষ, আমরা বুঝিনা ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ’ মানে কি আর এগুলো বলেছি আমার খুব আনন্দ লেগেছে। তখন আমি বসে বুঝিয়েছি যে ‘হরে কৃষ্ণ’ হচ্ছে ভগবানের নাম। যে ভগবানের নাম উচ্চারণ করে ভগবানের কৃপা খুশি হয়ে যায়। পাশ্চাত্য দেশের মানুষ যদি হরে কৃষ্ণ নাম করে খুশি হয়, তা আমাদের ভারতীয় হরিনাম করলে খুশি হবে না? অবশ্যই হবে। কিন্তু আজকাল অনেকে মনে করছে যুবক যে হরিনাম প্রাচীন ব্যাপার আমাদের এটা আধুনিক যুগ কিন্তু পাশ্চাত্য দেশে হরে কৃষ্ণ নাম করে তারাও পাচ্ছে আনন্দ। ‘হরে কৃষ্ণ’ প্রাচীন নাই, ‘হরে কৃষ্ণ’ নতুন নাই। ‘হরে কৃষ্ণ’ কোনো দেশে এখন নতুন হয়ে গেছে আর এখানে হয়তো পুরানো কিন্তু ‘হরে কৃষ্ণ’ হচ্ছে পারমার্থিক বস্তু, কালাতীত, এটা কখনো পুরানো হয় না, সব সময় নব যৌবন। কৃষ্ণ যেমন নব যৌবন রূপ থাকে, ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম নব যৌবন রূপ থাকে।

তো সেই জন্য, আপনাদের সকলকে হরে কৃষ্ণ নাম করার জন্য আমরা অনুরোধ করছি কারণ ‘হরে কৃষ্ণ’ করলে দেখবে প্রত্যেকদিনে কিছু সময় রাখি ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম করার জন্য, কিছু সময় ভগবদ্‌গীতা পাঠ করলে, আমাদের যে আধ্যাত্মিক যেটা আনন্দ আন্তরিক থেকে আত্মা থেকে আসছে সেটা উদয় হবে এবং সেই থেকে শান্তি হবে। আমরা মনুষ্য হয়ে আমাদের ভালো করে জানতে হয় জীবের উদ্দেশ্য কি, কেন আসছি, কোথায় যাচ্ছি আমাদের স্পষ্টভাবে সবকিছু জানা উচিত। এইভাবে আপনারা যদি হরে কৃষ্ণ নাম সকলে যদি করেন আমাদের সাথে তাহলে আমরা খুব আনন্দের মধ্যে থাকব। আমরা সকলে একসাথে ভগবত ধামে আমরা ফিরে যেতে পারব। আর এই জীবনে আমরা কৃষ্ণের সাথে থেকে আমাদের জীবনে এইভাবে আনন্দময় জীবন হয়ে থাকবে।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

তো এইটাই আমাদের উদ্দেশ্য এই রথযাত্রা উৎসবে, একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সকলে মানুষের ভগবানের নাম করে। আপনারা কয়জন হরে কৃষ্ণ নাম জপ করেন? প্রায় সবাই, সবাই ভক্ত। তা এইভাবে কৃষ্ণ নাম করে আপনার জীবন সফল হচ্ছে। আমি এখানে কালকেও আছি, পরশু দিন আছি। আশা করি আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে, এখানে সকাল-সকাল আসব তো আমার সাথে কোন প্রশ্ন দিতে পারেন। আমি আসছি ভক্তদের সেবা করার জন্য। চৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা... এখানে, গৌরমণ্ডল ভূমি, পশ্চিম বাংলার মধ্যে। চৈতন্য মহাপ্রভু গেছেন সাক্ষী গোপাল মন্দিরে, সাক্ষী গোপালের কাহিনী শুনে। সেই কাহিনী এখন নাটক চলছে। তা এখানে সমাপ্ত করছি। যারা নাটক দেখতে চায় দেখতে পাবেন।

হরে কৃষ্ণ!

- END OF TRANSCRIPTION -
Transcribed by
Verifyed by
Reviewed by